হাদিস শিক্ষা
হাদিস (আরবি: الحديث) বা আছার (আরবি: الأثر) হলো মূলত ইসলামের শেষ বাণীবাহকের বাণী ও জীবনাচরণ। হাদিসের উপদেশ মুসলমানদের জীবনাচরণ ও ব্যবহারবিধির অন্যতম পথনির্দেশ। কুরআন ইসলামের মৌলিক গ্রন্থ এবং হাদিসকে অনেক সময় তার ব্যাখ্যা হিসেবেও অভিহিত করা হয়। হাদিস বিষয়ে পণ্ডিত ব্যক্তিকে মুহাদ্দিস বলা হয়।
ইসলামে হাদিস সংরক্ষণ ও বর্ণনা করার গুরুত্ব
হাদীসে বলা হয়েছে,
আল্লাহ পাক সেই ব্যক্তিকে সতেজ, ও সমুজ্জ্বল রাখুন, যে আমার কথাগুলো শুনেছে, সংরক্ষণ করেছে এবং অপরজনের নিকট তা পৌঁছে দিয়েছে। (আবু দাউদ)
বলা হয়, যে ব্যক্তি মূলত অর্থেই হাদিস সন্ধানী হয় তার চেহারা সজীব বা নুরানি হয়ে ফুটে ওঠবে। অন্য হাদিসে বলা হয়েছে,
হে আল্লাহ, আমার উত্তরসূরিদের প্রতি রহম করুন। সাহাবিগণ জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলুাল্লাহ! আপনার উত্তরসূরি কারা? তিনি বলেন, তারাই যারা আমার হাদিস বর্ণনা করে ও মানুষের নিকট শিক্ষা দেয়।
হাদিসে বলা হয়েছে,
“নিশ্চয়ই কিয়ামতের দিন তারাই আমার নিকটবর্তী হবে যারা অধিক হারে আমার প্রতি দরূদ ও সালাম পেশ করে।” (তিরমিজি)
এই হাদিসটি ইবনে হিব্বান তার হাদিসের গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করেছেন এবং বলেছেন এই হাদিস এর ফায়েজ ও বরকত লাভ করবে নিশ্চিতভাবে মুহাদ্দিসানে কেরাম ও হাদিসের শায়খগণ। কারণ তারাই অধিক হারে হাদিস পড়ে, লিখে। যতবার হাদিস লিখবে বা পড়বে ততবার তিনি প্রিয়নবীর প্রতি দরূদ সালাম পড়বেন ও লিখবেন। এর ফলে রোজ কিয়ামতে সহজেই তারা প্রিয়নবীর নিকটবর্তী হতে পারবেন।
অন্যান্য ইসলামী বই পুস্তক অধ্যয়ন
আল্লাহ্ সুবহানু ওয়া তা’আলা সুরা আসরে সময়ের কসম দিয়ে বলেন, “মানুষ নিশ্চয় ক্ষতিগ্রস্থ” সময় ধাবমান জীবনের অস্তিত্ব থেকে, যাকে ঠেকানোর কোন উপায় নাই, একমাত্র তাকে কাজে লাগিয়ে যে টুকু ফায়দা লুটে নেয়া যায়, ফলে যখনই অবসর পাওয়া যায় তখনই কিছু একটা ভাল নিয়ে সময়কে পার করতে হবে। তা হয়তবা আল্লাহ্র জিকির বা কাকেও ভাল কথা/কাজ আর একান্তে ভাল ধর্মীয় বই পুস্তক পড়ে নিজেকে মশগুল রাখা। আশা করা যায় কিরামান কাতেবিন খাতায় হাঁধর্মী আমলই লিখবে। আর যদি ব্যস্ততার মধ্যেই থাকেন তবে তাও যেন ধনাত্মক কর্মই হয়।
Read Moreকুরআনুল কারীম তিলাওয়াত করা
বর্তমান যুগে মুসলিমরা সাওয়াবের নিয়ত ব্যতীত কোনো উদ্দেশ্যে কুরআনুল কারিম তিলাওয়াত করে না বললেই চলে, তাই তিলাওয়াতের সময় কুরআনুল কারিমের ইলম ও জ্ঞানের দিকে তাদের মন ধাবিত হয় না। অথচ ইলম, হিদায়েত ও রহমত লাভের নিয়তে তিলাওয়াত করে সওয়াবসহ অনেক উদ্দেশ্য হাসিল করা যায়।
বর্তমান যুগে মুসলিমরা কোরআনুল কারিম তিলাওয়াত করার সময় অনেকেই নিয়্যত করে তিলাওয়াত করেন। আবার অনেকেই নিয়্যত জানেন না। অথচ ইলম, হিদায়াত ও রহমত লাভের নিয়্যতে যদি পবিত্র কোরআন কেউ তিলাওয়াত করেন তাহলে অনেক সাওয়াব হাসিল করা যায়। এ প্রসঙ্গে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, «إِنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ، وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى» “নিশ্চয় প্রত্যেক আমল নিয়্যতের সাথে সম্পৃক্ত, আর প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য তাই রয়েছে-যা সে নিয়ত করেছে”। কিয়ামতের দিন নিয়তের কারণে আমলের সাওয়াবে অনেক ব্যবধান হবে। এ জন্য নিয়তকে জ্ঞানীদের ব্যবসা বলা হয়। নিম্নে কুরআনুল কারিম তিলাওয়াত করার কয়েকটি নিয়ত উল্লেখ করছি: ১. কুরআনুল কারিম ইলমের ভাণ্ডার ও হিদায়াতের উৎস, তাই ইলম ও হিদায়াত লাভের নিয়তে কুরআনুল কারিম তিলাওয়াত করা। আল্লাহ তাআলা বলেন: ﴿ أَفَلَا يَتَدَبَّرُونَ ٱلۡقُرۡءَانَۚ وَلَوۡ كَانَ مِنۡ عِندِ غَيۡرِ ٱللَّهِ لَوَجَدُواْ فِيهِ ٱخۡتِلَٰفٗا كَثِيرٗا ٨٢ ﴾ [النساء : ٨٢] “তারা কি কুরআন নিয়ে চিন্তা করে না? আর যদি তা আল্লাহ ছাড়া কারো পক্ষ থেকে হত, তবে অবশ্যই তারা এতে অনেক বৈপরীত্য দেখতে পেত”। অপর আয়াতে তিনি বলেন: ﴿ شَهۡرُ رَمَضَانَ ٱلَّذِيٓ أُنزِلَ فِيهِ ٱلۡقُرۡءَانُ هُدٗى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَٰتٖ مِّنَ ٱلۡهُدَىٰ وَٱلۡفُرۡقَانِۚ ١٨٥ ﴾ [البقرة: ١٨٥] “রমযান মাস, যাতে কুরআন নাযিল করা হয়েছে মানুষের জন্য হিদায়াতস্বরূপ এবং হিদায়াতের সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলীস্বরূপ ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে”। ২. মানব জাতির জীবন বিধান স্বরূপ আল্লাহ তা‘আলা কুরআনুল কারিম নাযিল করেছেন, তাই তিলাওয়াত করার সময় তার উপর আমল করার নিয়ত করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: ﴿ ٱتَّبِعُواْ مَآ أُنزِلَ إِلَيۡكُم مِّن رَّبِّكُمۡ وَلَا تَتَّبِعُواْ مِن دُونِهِۦٓ أَوۡلِيَآءَۗ ٣ ﴾ [الاعراف: ٣] “তোমাদের প্রতি তোমাদের রবের পক্ষ থেকে যা নাযিল করা হয়েছে, তা অনুসরণ কর এবং তাকে ছাড়া অন্য অভিভাবকের অনুসরণ করো না”। অপর আয়াতে তিনি বলেন: ﴿إِنَّ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَعَمِلُواْ ٱلصَّٰلِحَٰتِ يَهۡدِيهِمۡ رَبُّهُم بِإِيمَٰنِهِمۡۖ ٩﴾ [يونس: ٩] “নিশ্চয় যারা ঈমান আনে এবং নেক আমল করে, তাদের রব ঈমানের কারণে তাদেরকে পথ দেখাবেন”। ৩. কুরআনুল কারিম তিলাওয়াত করার ফলে ঈমান বৃদ্ধি হয়, তাই ঈমান বৃদ্ধির নিয়তে কুরআনুল কারিম তিলাওয়াত করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: وَإِذَا مَآ أُنزِلَتۡ سُورَةٞ فَمِنۡهُم مَّن يَقُولُ أَيُّكُمۡ زَادَتۡهُ هَٰذِهِۦٓ إِيمَٰنٗاۚ فَأَمَّا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ فَزَادَتۡهُمۡ إِيمَٰنٗا وَهُمۡ يَسۡتَبۡشِرُونَ ١٢٤ التوبة:124]. “আর যখনই কোন সূরা নাযিল করা হয়, তখন তাদের কেউ কেউ বলে, ‘এটি তোমাদের কার ঈমান বৃদ্ধি করল? অতএব যারা মুমিন, নিশ্চয় তা তাদের ঈমান বৃদ্ধি করেছে এবং তারা আনন্দিত হয়”। ৪. কুরআনুল কারিম আল্লাহর কালাম, যে কুরআন তিলাওয়াত করে সে আল্লাহর সাথে কথা বলে, আল্লাহ তার কথা খুব শ্রবণ করেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: «مَا أَذِنَ اللَّهُ لِشَيْءٍ، مَا أَذِنَ لِنَبِيٍّ حَسَنِ الصَّوْتِ بِالْقُرْآنِ يَجْهَرُ بِهِ » “আল্লাহ কোনো বস্তু এভাবে শ্রবণ করেননি, যেভাবে কুরআনের ক্ষেত্রে সুন্দর আওয়াজ সম্পন্ন নবীর জন্য শ্রবণ করেছেন, যিনি উচ্চস্বরে কুরআন মাজিদ পড়েন।” ৫. কুরআন শিফা ও রোগ থেকে মুক্তির উপায়। কুরআন তিলাওয়াতের ফলে শরীর ও আত্মার রোগ দূরীভূত হয়। অতএব রোগ থেকে মুক্তি ও ঝাড়-ফুকের নিয়তে কুরআনুল কারিম তিলাওয়াত করা। আল্লাহ তাআলা বলেন: ﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ قَدۡ جَآءَتۡكُم مَّوۡعِظَةٞ مِّن رَّبِّكُمۡ وَشِفَآءٞ لِّمَا فِي ٱلصُّدُورِ وَهُدٗى وَرَحۡمَةٞ لِّلۡمُؤۡمِنِينَ ٥٧ ﴾ [يونس : ٥٧] “হে মানুষ, তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে এসেছে উপদেশ এবং অন্তরসমূহে যা থাকে তার শিফা, আর মুমিনদের জন্য হিদায়াত ও রহমত”। 6. কিয়ামতের দিন উঁচু মর্যাদা লাভের নিয়তে কুরআনুল কারিম তিলাওয়াত করা। আল্লাহ তাআলা বলেন: ﴿إِنَّهُمۡ كَانُواْ يُسَٰرِعُونَ فِي ٱلۡخَيۡرَٰتِ وَيَدۡعُونَنَا رَغَبٗا وَرَهَبٗاۖ وَكَانُواْ لَنَا خَٰشِعِينَ ٩٠ ﴾ [الانبياء: ٩٠] “নিশ্চয় তারা সৎকাজে প্রতিযোগিতা করত, আর আমাকে আশা ও ভীতিসহ ডাকত, আর তারা ছিল আমার নিকট বিনয়ী”। 7. সাওয়াব ও মহান প্রতিদান লাভের নিয়তে কুরআনুল কারিম তিলাওয়াত করা। উকবাহ ইবনে ‘আমের আল-জুহানি রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: «خَرَجَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَنَحْنُ فِي الصُّفَّةِ، فَقَالَ: أَيُّكُمْ يُحِبُّ أَنْ يَغْدُوَ كُلَّ يَوْمٍ إِلَى بُطْحَانَ، أَوْ إِلَى الْعَقِيقِ فَيَأْتِيَ مِنْهُ بِنَاقَتَيْنِ كَوْمَاوَيْنِ، فِي غَيْرِ إِثْمٍ، وَلَا قَطْعِ رَحِمٍ؟ فَقُلْنَا: يَا رَسُولَ اللَّهِ، نُحِبُّ ذَلِكَ، قَالَ: ” أَفَلَا يَغْدُو أَحَدُكُمْ إِلَى الْمَسْجِدِ فَيَعْلَمُ، أَوْ يَقْرَأُ آيَتَيْنِ مِنْ كِتَابِ اللَّهِ خَيْرٌ لَهُ مِنْ نَاقَتَيْنِ، وَثَلَاثٌ خَيْرٌ لَهُ مِنْ ثَلَاثٍ، وَأَرْبَعٌ خَيْرٌ لَهُ مِنْ أَرْبَعٍ، وَمِنْ أَعْدَادِهِنَّ مِنَ الإِبِلِ؟ » “একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হয়ে আসলেন, আমরা তখন সুফফায় ছিলাম, তিনি বললেন: তোমাদের থেকে কে পছন্দ করে প্রতিদিন বুতহান অথবা আকিক স্থানে যাবে, অতঃপর সেখান থেকে উঁচু কুঁজ বিশিষ্ট দু’টি উট নিয়ে আসবে, অপরাধ সংগঠন ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা ব্যতীত? আমরা বললাম: হে আল্লাহর রাসূল, আমরা তা পছন্দ করি। তিনি বললেন: তাহলে কেন তোমাদের কেউ মসজিদে গিয়ে আল্লাহর কিতাব থেকে দু’টি আয়াত শিখে না, অথবা তিলাওয়াত করে না, যা তার জন্য দু’টি উট থেকে উত্তম, এবং তিনটি আয়াত তিনটি উট থেকে উত্তম, এবং চারটি আয়াত চারটি উট থেকে উত্তম, অনুরূপ আয়াতের সংখ্যা উটের সংখ্যা থেকে উত্তম”। 8. কিয়ামতের দিন কুরআনুল কারিম তার তিলাওয়াতকারীর জন্য সুপারিশ করবে, তাই সুপারিশ লাভের নিয়তে কুরআনুল কারিম তিলাওয়াত করা। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: «تَعَلَّمُوا الْقُرْآنَ، فَإِنَّهُ شَافِعٌ لِصَاحِبِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، تَعَلَّمُوا الزَّهْرَاوَيْنِ: سُورَةَ الْبَقَرَةِ، وَآلِ عِمْرَانَ، فَإِنَّهُمَا يَجِيئَانِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ كَأَنَّهُمَا غَمَامَتَانِ أَوْ غَيَايَتَانِ أَوْ كَفِرْقَيْنِ مِنْ طَيْرٍ صَوَافَّ، يَشْفَعَانِ لِصَاحِبِهِمَا يَوْمَ الْقِيَامَةِ، تَعَلَّمُوا الْبَقَرَةَ، فَإِنَّ أَخْذَهَا بَرَكَةٌ، وَتَرْكَهَا حَسْرَةٌ، وَلا تَسْتَطِيعُهَا الْبَطَلَةُ » “তোমরা কুরআন শিখ, কারণ কিয়ামতের দিন কুরআন তার পাঠকের জন্য সুপারিশকারী হবে। তোমরা দু’টি উজ্জ্বল বস্তু শিখ: সূরা বাকারা ও সূরা আলে-ইমরান, কারণ কিয়ামতের দিন এ দু’টি সূরা দু’টি মেঘের মত, অথবা দু’টি ছায়ার মত, অথবা সারিবদ্ধ উড়ন্ত পাখির দু’টি ডানার মত, কিয়ামতের দিন তারা উভয়ে তাদের পাঠকের জন্য সুপারিশ করবে, তোমরা সূরা বাকারা শিক্ষা কর, কারণ তা শিক্ষা করা বরকত ও ত্যাগ করা অনুশোচনা, কোনো জাদুকর তা শিখতে সক্ষম নয়”। 9. আল্লাহর রহমত ও অনুগ্রহ লাভের নিয়তে কুরআনুল কারিম তিলাওয়াত করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: إِنَّ هَٰذَا ٱلۡقُرۡءَانَ يَقُصُّ عَلَىٰ بَنِيٓ إِسۡرَٰٓءِيلَ أَكۡثَرَ ٱلَّذِي هُمۡ فِيهِ يَخۡتَلِفُونَ ٧٦ وَإِنَّهُۥ لَهُدٗى وَرَحۡمَةٞ لِّلۡمُؤۡمِنِينَ ٧٧ [النمل:76-77] “নিশ্চয় এ কুরআন তাদের কাছে বর্ণনা করছে, বনী ইসরাইল যেসব বিষয় নিয়ে বিতর্ক করছে তার অধিকাংশই; আর নিশ্চয় এটি মুমিনদের জন্য হিদায়াত ও রহমত”।
Read Moreযাকাত
কোন ব্যক্তির ওপর ইবাদত ফরজ হওয়ার জন্য কিছু শর্ত থাকে। যাকাত ফরজ হওয়ার জন্যও কিছু শর্ত আছে। এগুলোর মধ্যে কিছু শর্ত ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্কিত। আবার যাকাত আর্থিক ইবাদত হওয়ায় সম্পদের সঙ্গে সম্পর্কিত কিছু শর্তও আছে। শর্তগুলো হলো-
মুসলিম হওয়া : যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য প্রথম শর্ত হলো মুসলিম হওয়া। যাকাত মুসলিমদের ওপর এক প্রকারের ইবাদত বিধায় তা অমুসলিমদের জন্য ফরজ হওয়ার বিষয়টি অপ্রাসঙ্গিক।
বালিগ বা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া : শাফি’ঈ, মালিকী ও হাম্বলী মাযহাব মতে, সম্পদশালী শিশুর ওপর যাকাত ফরজ হবে। তার সম্পদ হতে তার ওয়ালী বা দায়িত্বপ্রাপ্ত অভিভাবক যাকাত আদায় করবেন। হানাফী মাযহাব মতে, প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পূর্বে শিশুর সম্পদে যাকাত নেই। শিশুর সম্পদে যাকাত ফরজ না হওয়ার পক্ষে তাদের দলিল হলো রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তিন প্রকারের মানুষের ওপর হতে তাকলীফের কলম তুলে নেয়া হয়েছে- পাগল, যতক্ষণ না তার জ্ঞান ফিরে আসে; ঘুমন্ত ব্যক্তি যতক্ষণ না সে জাগ্রত হয় এবং শিশু যতক্ষণ না সে প্রাপ্তবয়স্ক হয়’ (জামে আত তিরমিযী)। তাছাড়া যাকাত এক প্রকারের ইবাদত বিধায় শিশুর ওপর তা ফরজ হবে না, যেমন সালাত ও রোযা শিশুর ওপর ফরজ হয় না (আল-কাসানী)। তবে অধিকাংশ আলেমদের মতে শিশুদের যাকাত পরিশোধ করাই অধিকতর দলিলসম্মত।
বিবেক-বুদ্ধিসম্পন্ন হওয়া : হানাফী মাযহাব মতে, যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য বুদ্ধিসম্পন্ন হওয়ার শর্ত রয়েছে। তাই পাগলের ওপর যাকাত ফরজ নয়। যুক্তি হিসেবে তাঁরা তিন প্রকারের ব্যক্তির ওপর তাখলীফের কলম তুলে নেয়ার হাদীসটি উল্লেখ করেন। অন্যান্য মাযহাব মতে, পাগলের ওপর যাকাত ফরজ হবে, তার পক্ষ হতে দায়িত্বপ্রাপ্ত অভিভাবক যাকাত আদায় করবেন।
স্বাধীন ব্যক্তি হওয়া : যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য সম্পদের মালিকের স্বাধীন হওয়া অন্যতম শর্ত। এ কারণে দাসের ওপর যাকাত ফরজ নয়। বস্তুতপক্ষে দাস কোনো সম্পদের মালিক নয়, তার সব সম্পদের মালিক তার মনিব। তাই তার ওপর যাকাত ফরজ হওয়ার কোন প্রশ্ন নেই।
নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকা : যাকাত ফরজ হওয়ার অন্যতম শর্ত হলো নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকা। শরীয়াহ কর্তৃক নির্ধারিত একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদকে নিসাব বলে। যে পরিমাণ সম্পদ থাকলে যাকাত ফরজ হয়। এ সম্পদগুলো হলো নগদ বা ব্যবসায় বিনিয়োগকৃত টাকা, স্বর্ণ, রৌপ্য, শস্য ও প্রাণী।
সম্পদের ওপর পূর্ণ মালিকানা : যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য সম্পদের ওপর মালিকানা ও পূর্ণাঙ্গ দখল থাকতে হবে এবং সম্পদ ব্যবহারের নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী হতে হবে, অন্যথায় যাকাত ফরজ হবে না। যেমন জনকল্যাণে ওয়াকফকৃত সম্পদে যাকাত নেই। তবে কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তির জন্য ওয়াকফ করা হলে তার যাকাত দিতে হবে।
যৌথ মালিকানাভুক্ত সম্পত্তির যাকাত : কোন সম্পদের দুই বা ততোধিক মালিক থাকলে প্রত্যেকে নিজ নিজ অংশের যাকাত দেবেন। যদি প্রত্যেক মালিকের অংশ আলাদাভাবে নিসাব পরিমাণ না হয় তাহলে কাউকে যাকাত দিতে হবে না। যদি কারো অংশ নিসাব পরিমাণ হয় তবে তাকে যাকাত দিতে হবে।
হারাম সম্পদের যাকাত : চুরি, ডাকাত, সুদ, ঘুষ, ছিনতাই, রাহাজানি, অবৈধ ব্যবসা ইত্যাদি অবৈধ উপায়ে অর্জিত সম্পদ হারাম বা অবৈধ সম্পদ বলে গণ্য। হারাম পন্থায় উপার্জনকারী ব্যক্তি ওই সম্পদের মালিক নয়। অতএব, তা খরচের অধিকারও তার নেই। যাকাত প্রদানও এক ধরনের খরচ।
সম্পদ বর্ধনযোগ্য হওয়া : যাকাত ফরজ হওয়ার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো দরিদ্রকে সহযোগিতা এবং তার প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করা। কিন্তু নিশ্চয়ই আল্লাহ চান না যে, যাকাত আদায় করে ধনী ব্যক্তি দরিদ্র হয়ে যাক। সম্পদ যদি বর্ধনশীল না হয় এবং তা হতে বছরের পর বছর যাকাত আদায় করা হতে থাকে, তাহলে ধনী ব্যক্তি এক সময় দরিদ্র্য হয়ে যাবে। তাই যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য সম্পদ বর্ধনশীল হওয়া অপরিহার্য।
সম্পদ একবছর অধিকারে থাকা : কোন সম্পদ যদি এক বছরের কম সময়ে হাতে থাকে, তবে তার ওপর যাকাত ফরজ হবে না। এ শর্তটি নগদ অর্থ, স্বর্ণ-রৌপ্য, চতুষ্পদ জন্তু ও ব্যবসায়িক পণ্যের যাকাতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘একবছর পূর্ণ হওয়ার পূর্বে কোন সম্পদে যাকাত নেই’। (সুনানে আবু দাউদ)
সম্পদ মৌলিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত হওয়া: হানাফী মাযহাবের আলিমগণ যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য অতিরিক্ত একটি শর্তারোপ করেন, সেটি হলো যাকাতযোগ্য সম্পদ মৌলিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত হওয়া। তাই নিত্যপ্রয়োজনীয় সম্পদের ওপর যাকাত ফরজ হয় না। যে ব্যক্তির মৌলিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ নেই তাকে ধনী বলা যায় না। আর যাকাত ফরজ করা হয়েছে ধনীদের ওপর। রাসূলুল্লাহ (সা.) যাকাত সংগ্রহ ও বণ্টনের বিষয়ে নির্দেশনা দিয়ে মু’আয (রা.)কে বলেছিলেন, ‘এটি ধনীদের কাছ থেকে আদায় করে দরিদ্রদের মাঝে বণ্টন করতে হবে।’ (সহীহ আল বুখারী)
ঋণমুক্ত হওয়া : ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির সম্পদের প্রথম হকদার হলো পাওনাদার। তাই প্রথমে ঋণ আদায় করতে হবে। অবশিষ্ট সম্পদ নিসাব পরিমাণ হলে যাকাত দিতে হবে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কারো ওপর ঋণ থাকলে সে যেন প্রথমে তা শোধ করে, তারপর বাকি সম্পদের যাকাত আদায় করবে।’ (মুয়াত্তা)
মৃত ব্যক্তির যাকাত : কোনো ব্যক্তির ওপর যাকাত ফরজ হয়েছে কিন্তু তিনি তা আদায় না করে মৃত্যুবরণ করেছেন, তাহলে তার রেখে যাওয়া সম্পদ হতে ওয়ারিশগণ বা সম্পদের তত্ত্বাবধায়ক যাকাত আদায় করবেন।
বহির্বিশ্বে রক্ষিত সম্পদের যাকাত : কারো সম্পদ যদি বিদেশের ব্যাংকে থাকে কিংবা কেউ যদি বিদেশে ব্যবসা করেন এবং ওই সম্পদের ওপর যাকাত ফরজ হয়, তবে তাকে যাকাত আদায় করতে হবে। বিদেশে শরীয়াহ নির্ধারিত খাতে যাকাত বণ্টন করার সুযোগ থাকলে তিনি সেখানে বণ্টন করতে পারবেন, অন্যথায় নিজ দেশে যাকাত আদায় করবেন।
কয়েদি বা সাজাপ্রাপ্ত আসামীর যাকাত : কারাদণ্ড বা বন্দিদশা যাকাত রহিত করে না। কারাবন্দী সে হাজতি হোক বা সাজাপ্রাপ্ত হোক নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে তাকে যাকাত দিতে হবে। তার পক্ষ হতে তার পরিবারের সদস্য বা তার সম্পদের তত্ত্বাবধায়ক যাকাত আদায় করবেন। যদি তা না হয় মুক্তিলাভের পর পূর্বের বছরগুলোর যাকাত তাকে হিসাব করে আদায় করতে হবে।
মুসাফিরের যাকাত : সফরের কারণেও যাকাতের বিধান রহিত হয় না। মুসাফির ব্যক্তি (সফরকারী ব্যক্তি) যদি নিজ দেশে নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হন তাহলে ওই সম্পদের যাকাত দিতে হবে। এটা সত্য যে, সম্পদশালী মুসাফিরও যদি বিদেশে বিপদগ্রস্ত হন তাহলে তিনি যাকাত গ্রহণ করতে পারেন। তাই বলে এ বিধানের বলে দেশে রক্ষিত সম্পদের ওপর যাকাতের আবশ্যকতা রহিত হয় না।
তথ্যসূত্র : সেন্টার ফর যাকাত ম্যানেজমেন্ট (সিজেডএম)
Read Moreহজ্জ
হজ্ব এর আভিধানিক ও পারিভাষিক অর্থ
হজ্ব আরবি শব্দ। এর অর্থ নিয়ত করা, দর্শন করা, সঙ্কল্প করা, গমন করা, ইচ্ছা করা, প্রতিজ্ঞা করা। পরিভাষায় নির্দিষ্ট দিনে নিয়তসহ ইহরামরত অবস্থায় আরাফার ময়দানে অবস্থান করা এবং বায়তুল্লাহ শরীফ তাওয়াফ করা।
অন্য দিকে , জিলহজ্বের ৯ তারিখ ইহরাম বেঁধে আরাফাতের মাঠে অবস্থানসহ কয়েকটি নির্দিষ্ট স্থানে নির্ধারিত কয়েকটি আমল যথাযথভাবে আদায় করে কাবা গৃহ তাওয়াফ করাকে হজ্ব বলে।।
হজ্বের প্রকার
হজ তিন প্রকার যথা
- হজ্জে ইফরাদ
অর্থাৎ হজ্জের সফর শুরু করার সময় মিকাত থেকে যদি শুধু হজের নিয়তে ইহরাম বাঁধে এবং হজের সঙ্গে ওমরাহ আদায় না করে তাহলে এ প্রকার হজকে ‘হজে ইফরাদ’ বলা হয়। এ প্রকার হজ কারীকে শরিয়তের ভাষায় ‘ মুফরিদ ’ বলে।
- হজে কিরান
অর্থাৎ কেউ যদি একই সঙ্গে হজ এবং ওমরাহর নিয়ত করে উভয়টিই পালন করে এবং হজ ও ওমরাহর জন্য একই ইহরাম বাঁধে, তাহলে এ ধরনের হজকে শরিয়তের ভাষায় ‘হজে কিরান’ বলা হয়। এ প্রকার হজ কারীকে ‘ কারিন’ বলে।
- হজে তামাত্তু
হজের সঙ্গে ওমরাহকে এভাবে মেলানো যে ‘মিকাত’ থেকে শুধু ওমরাহর ইহরাম বাঁধা। এই ইহরামে মক্কায় পৌঁছে ওমরাহ পালনের পর ইহরাম ভেঙে ৭ জিলহজ সেখান থেকে হজের ইহরাম বেঁধে হজ পালন করাকে ‘হজে তামাত্তু’ বলে। এ প্রকারের হজ কারীকে ‘মুতামাত্তি ’ বলে।
Read Moreসিয়াম
‘সিয়ামুন’ শব্দটি ‘সাওমুন’-এর বহুবচন। এটি একটি আরবি শব্দ এবং ইসলামের ধর্মীয় পরিভাষাগুলোর অন্যতম। যার আভিধানিক অর্থ বিরত থাকা। আর পারিভাষিক অর্থে সাওম বা সিয়াম বলতে কোনো মুমিন ব্যক্তি মহান আল্লাহর নির্দেশ পালনের নিয়তে তাঁরই নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে সুবহে সাদিক উদিত হওয়ার পূর্ব থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত খাদ্য-পানীয় ও যৌনতা থেকে বিরত থাকাকে বোঝায়। সাওমকে আমরা বাংলা ভাষাভাষী মানুষ রোজা বলে জানি।
আর রোজা শব্দটা বাংলা ভাষায় আগত একটি বিদেশি শব্দ। রোজা ফারসি ভাষা থেকে এসেছে। যেমন—নামাজ, এজলাস, মুনসেফ ইত্যাদি। রোজা ইসলামের মৌলিক পাঁচটি বেনার অন্যতম।
সাওম বা রোজার রোকন দুটি। যথা : ১) সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত খাদ্য, পানীয় ও যৌনতা থেকে বিরত থাকা। ইরশাদ হয়েছে, অতঃপর তোমরা নিজেদের স্ত্রীদের সঙ্গে সহবাস করো এবং যা কিছু তোমাদের জন্য আল্লাহ দান করেছেন, তা আহরণ করো। আর পানাহার করো যতক্ষণ না রাতের কালো রেখা থেকে ভোরের শুভ্র রেখা স্পষ্ট হয়ে যায়। অতঃপর রোজা পূর্ণ করো রাত পর্যন্ত। (সুরা আল-বাকারা : ১৮৭) ২) নিয়ত করা। এরশাদ হয়েছে, তাদের এ ছাড়া অন্য কোনো নির্দেশ দেওয়া হয়নি যে তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে। (সুরা আল-বায়্যিনাহ : ৫)
রোজা আদায়ের জন্য নিয়ত করা জরুরি। নিয়ত ছাড়া সারা দিন খাদ্য, পানীয় ও যৌনতা থেকে বিরত থাকলে সেটা রোজা হিসেবে গণ্য হবে না। ফরজ রোজার জন্য সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়ার আগে নিয়ত করতে হবে। নিয়ত আরবি শব্দটির অর্থ মনের ইচ্ছা। সুতরাং রমজান মাসের ফরজ রোজা আদায়ের জন্য মনে ইচ্ছা পোষণ করাই যথেষ্ট। সে মতে, গভীর রাতে ঘুম থেকে ওঠা, অজু করা, খাবার গ্রহণ করা এসবই তো নিয়তের দ্বারা পরিচালিত হয়।
সুতরাং নিয়ত করতে ভুলে গেছি, রোজা হবে কি না এ জাতীয় প্রশ্ন অবান্তর। তবে যাঁরা রাতে ঘুম না ভাঙার কারণে সূর্য ওঠার পরে জাগ্রত হন, তাঁদের ক্ষেত্রে নিয়তের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। নিয়ত মুখে উচ্চারণ করা মুস্তাহাব। নিয়ত আরবিতে করা জরুরি নয়। তবে যদি কেউ আরবি ভাষা বুঝতে পারেন, তাহলে তিনি আরবিতে নিয়তের উচ্চারণ করতে পারেন। নিয়ত আরবিতে বা বাংলায় করাতে নেকি কম বা বেশি হওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই।
রাসুলুল্লাহ (সা.) মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করার পরে দ্বিতীয় বছর রমজান মাসের রোজা ফরজ করা হয়। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনের আয়াত নাজিল হয়, রমজান হলো সে মাস, যাতে কোরআন নাজিল করা হয়েছে। মানুষের হেদায়েতের জন্য এবং হক ও বাতিলের মাঝে পার্থক্য নির্ধারণের জন্য। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে মাসটি পাবে, সে তাতে রোজা রাখবে। (সুরা আল-বাকারা : ১৮৫) দ্বিতীয় হিজরি শাবান মাসে আয়াতটি নাজিল হয় এবং ওই বছর থেকেই রাসুলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবিগণ রমজানের ফরজ রোজা রাখতে শুরু করেন।
দ্বিতীয় হিজরিতে রমজান মাসের রোজা ফরজ হওয়ার আগে মুসলমানগণ আশুরা, অর্থাৎ মুহররম মাসের ১০ তারিখে রোজা রাখতেন। কারো কারো মতে, রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার আগে আশুরার রোজা ফরজ ছিল। অতঃপর রমজান মাসের রোজা ফরজ হওয়ার পরে আশুরার রোজাকে নফল হিসেবে গণ্য করা হয়। আবার কেউ কেউ বলেছেন, আশুরার রোজা তখনো নফল ছিল। তবে রাসুলুল্লাহ (সা.) এটিকে খুব গুরুত্বসহ আদায় করতেন। হজরত আয়েশা (রা.) একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আশুরা এমন একটি দিন, যাতে কোরাইশরা জাহেলি যুগে রোজা রাখত এবং রাসুলুল্লাহও (সা.) জাহেলি যুগে ওই দিন রোজা রাখতেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় হিজরত করার পর তিনি নিজে ওই দিন রোজা রাখতেন এবং অন্যদের রোজা রাখতে বলতেন। অতঃপর যখন রমজান মাসের রোজা ফরজ করা হলো, তখন থেকে আশুরার রোজার বাধ্যবাধকতা বর্জিত হলো। সুতরাং তখন যার ইচ্ছা, সে আশুরার রোজা রাখত আর যার ইচ্ছা আশুরার রোজা বর্জন করত। (সহিহ আল-বোখারি, হাদিস : ২০০২, সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১১২৫, সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ২৪৪২, সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৭৫৩, মুআত্তা ইমাম মালেক, খণ্ড : ৩, হাদিস : ১০৫২) ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক বিধান, গুনাহ মাফের সীমাহীন সুযোগ আর জান্নাত লাভের মহৎ সোপান হলো সিয়ামে রমজান। তাই প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিম নর ও নারীর উচিত মাহে রমজানের সব রোজা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে পালন করা।
Read Moreসালাত
ক) দৈনন্দিন সালাত
দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করা ফরজ। ফরজের পাশাপাশি প্রত্যেক ওয়াক্তেই ওয়াজিব, সুন্নাত এবং নফল সালাত রয়েছে।
সালাতুল ফজর
ফজরে প্রথমে দুই রাকাআত সুন্নাত এবং পরে দুই রাকাআত ফরজ।
সালাতুল জোহর
যুহরের সালাতের প্রথমে চার রাকাআত সুন্নাত। তারপর চার রাকাআত ফরজ এবং তারপর দুই রাকাআত সুন্নাত। এ দশ রাকাআত পড়া উত্তম। কেউ কেউ সর্বশেষ দুই রাকআত নফল সালাতও পড়ে। এ হিসেবে জোহরের সালাত ১২ রাকাআত আদায় করা হয়।
সালাতুল আসর
আসরের সালাত চার রাকাআত পড়া ফরজ। কেউ কেউ ফরজের পূর্বে চার রাকাআত সুন্নাত সালাত পড়ে থাকে।
সালাতুল মাগরিব
মাগরিবে প্রথম তিন রাকাআত ফরজ। তারপর দুই রাকাআত সুন্নাত। কেউ কেউ সুন্নাতের পর দুই রাকাআত নফল পড়ে থাকে।
সালাতুল ইশা
ইশার সালাত চার রাকাআত ফরজ। তারপর দুই রাকাআত সুন্নাত। অতপর এক/তিন/পাঁচ/সাত/নয় রাকাআত বিতর। বিতর পড়া ওয়াজিব। অনেকে ফরজের পূর্বে চার রাকাআত সুন্নাত এবং বিতরের পর দুই রাকাআত নফল সালাতও পড়ে থাকে।
পরিশেষে
সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে ফজর ৪ রাকাআত; জোহর ১০ রাকাআত; আসর ৪ রাকাআত, মাগরিব ৫ রাকাআত এবং ইশার ৯ রাকাআত সালাত যথাযথ আদায়ে যত্নবান হওয়া আবশ্যক। পাশাপাশি প্রত্যেক ওয়াক্তের আগে পরের সুন্নাত ও নফল আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
খ) জুমুয়ার সালাত
প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.) ইরশাদ করেছেন, জুমা হচ্ছে শ্রেষ্ঠ
দিবস। পবিত্র কোরআনে সূরা আল জুমায় ইরশাদ করা হয়েছে,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نُودِي لِلصَّلَاةِ مِن يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَى ذِكْرِ اللَّهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ
‘মুমিনগণ, জুমার দিনে যখন সালাতের আজান দেয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহ্র স্মরণের পানে ত্বরা কর এবং বেচাকেনা বন্ধ কর। এটা তোমাদের জন্যে উত্তম যদি তোমরা বুঝ।’ (সূরা: আল জুমা, আয়াত: ৯)
জুমার সালাত একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এ সালাত ছেড়ে দিলে হাদিসে ভয়াবহ ক্ষতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এ জন্য প্রতিটি মুসলিমকে অবশ্যই জুমার সালাত গুরুত্বসহ পড়া উচিত।
গ) দুই ঈদের সালাত
মুসলমানদের ঈদ দুটি: একটি হলো রমজানের পর ঈদুল ফিতর। অপরটি হলো আরাফা দিবসের পর ঈদুল আযহা। জাহিলীযুগের উৎসব-পার্বন ও নব আবিষ্কৃত উৎসব-পার্বনের জায়গায় আল্লাহ্ তা’আলা এ দুই ঈদ বিধিবদ্ধ করে দিয়েছেন। আনাস ইবনে মালিক রাযি. বলেন, জাহিলীযুগে বছরে দুটি দিবস ছিল যেখানে তারা খেল-তামাশা করত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মদীনায় এলেন, তিনি বললেন, «তোমাদের দুটি দিবস ছিল, যাতে তোমরা খেলতে। আল্লাহ্ তা’আলা ওই দুটি পরিবর্তন করে তোমাদের জন্য উত্তম দিবস দিয়েছেন: ঈদুল ফিতর দিবস ও ঈদুল আযহা দিব, (বর্ণনায় নাসায়ী) অতএব কাফিরদের ঈদে অংশ নেয়া বৈধ নয়; কেননা তা কোনো ধর্ম, বিধান বা জীবন পদ্ধতির স্পষ্টতম গুনাহ। আল্লাহ তাআলা বলেন:
(وَلَا تَتَّبِعۡ أَهۡوَآءَهُمۡ عَمَّا جَآءَكَ مِنَ ٱلۡحَقِّۚ لِكُلّٖ جَعَلۡنَا مِنكُمۡ شِرۡعَةٗ وَمِنۡهَاجٗاۚ )
দুই ঈদের নামাজের হুকুম
ঈদের সালাত ওয়াজিব। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ সালাত পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এমনকি তিনি নারী, শিশু ও বৃদ্ধদেরকেও ঈদের সালাতে নিয়ে যেতে নির্দেশ দিয়েছেন। এমনকি হায়েযগ্রস্ত নারীদেরকেও ঈদের মাঠে নিয়ে যেতে বলেছেন, যদিও তারা সালাত পড়বে না। তারা এ ভালো কর্ম ও মুসলমানদের দু’আয় হাজির হবে।
ঈদের সালাত ওয়াজিব হওয়ার দলিল:
আল্লাহ্ তাআলার বাণী:
(فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَٱنۡحَرۡ ٢)
{অতএব তোমার রবের উদ্দেশ্যেই সালাত পড় এবং নহর কর} [সূরা আল কাউছার:২]
ঈদের সালাত আদায় পদ্ধতি
ঈদের সালাত দু রাকাত, যাতে আযান ইকামত নেই। ইমাম ব্যতীত একা একা ঈদের সালাত পড়ার কোন অবকাশ নাই অর্থাৎ জামাতের সাথে পড়তে হবে। ঈদের সালাতের কিরাত প্রকাশ্যে পড়তে হয়। ঈদের নামাজ আদায় পদ্ধতি হলো নিম্নরূপ:
২. প্রথম রাকাতে তাকবীরে তাহরিমা, ছানা পাঠ, আউযুবিল্লাহ পাঠ ও কিরাত পড়ার পর ছয় তাকবীর দেবে।
৩. আউযুবিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ পড়ার পর সূরা ফাতিহা পড়ে এর সাথে অন্য একটি সূরা মিলাবে। সুন্নত হলো সূরা ফাতিহার পর সূরা আল আ’লা পড়া। আর দ্বিতীয় রাকাতে সূরা আল গাশিয়া পড়া। অথবা প্রথম রাকাতে সূরা ক্বাফ পড়া ও দ্বিতীয় রাকাতে সূরা আল কামার পড়া।
৪. দ্বিতীয় রাকাতে কিরাত পড়া শেষে রুকুতে যাওয়ার পূর্বে অতিরিক্ত পাঁচ তাকবীর দেবে। প্রতি তাকবীরের সাথে হাত উঠাবে।
৫. তাকবীরগুলোর মাঝে আল্লাহ তাআলার প্রশংসা করবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি দরুদ পড়বে।
৬. সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করার পর ইমাম মিম্বারে উঠবে। দুটি খুতবা দেবে। এ দুটির মাঝে সামান্য সময়ের জন্য বসবে। প্রথম খুতবা নয় তাকবীরের সাথে শুরু করবে। আর দ্বিতীয় খুতবা সাত তাকবীরের সাথে শুরু করবে।
৭. ঈদুল ফিতরে মুস্তাহাব হলো মানুষদেরকে সদকায়ে ফিতর সম্পর্কে স্মরণ করিয়ে দেয়া। আর ঈদুল আযহায় কুরবানীর হুকুম আহকাম বিষয়ে স্মরণ করিয়ে দেয়া।
ঈদের নামাজ আদায়ের জায়গা
ঈদের নামাজ মসজিদে নয় বরং মাঠে পড়া সুন্নত। প্রয়োজনে যদি মসজিদে পড়া হয় তবে কোনো সমস্যা হবে না।
ঈদের নামাজের মুস্তাহাবসমূহ
১. ইমাম ব্যতীত অন্যান্য মুসুল্লীরা সকাল সকাল ঈদগাহে আসবে এবং প্রথম কাতারের দিকে আগাবে।
২. যদি সম্ভব হয় তাহলে পায়ে হেঁটে এক পথে যাবে এবং অন্য পথে ফিরে আসবে। জাবির রাযি. বর্ণনা করে বলেন, «ঈদের দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যাওয়া-আসার রাস্তায় পার্থক্য করতেন।» [বর্ণনায় বুখারী]
৩. ঈদুল ফিতরের নামাজের উদ্দেশে বের হওয়ার পূর্বে বেজোড় সংখ্যায় খেজুর খাওয়া (তিনটি অথবা পাঁচটি)। আর ঈদুল আযহায় নামাজ থেকে ফিরে আসার পূর্বে কিছু না খাওয়া|
ঈদুল ফিতরের নামাজ দেরিতে আদায় করা মুস্তাহাব; যাতে মানুষ সদকায়ে ফিতর আদায় করতে ও হকদারদের কাছে তা পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়। পক্ষান্তরে ঈদুল আযহার নামাজ সকাল-সকাল আদায় করা মুস্তাহাব|
দুই ঈদের আহকাম
১. ঈদগাহে, ঈদের নামাজের পূর্বে ও পরে, নফল নামাজ পড়া মাকরুহ। কিন্তু যদি ঈদের নামাজ মসজিদে আদায় করা হয়, তাহলে মসজিদে প্রবেশের সময় তাহিয়াতু মসজিদ পড়া শুদ্ধ রয়েছে।
২. যে ব্যক্তির ঈদের নামাজ পুরোটা বা অংশত ছুটে গেল তার জন্য সুন্নত হলো ঈদের নামাজের আদায় পদ্ধতি অবলম্বন করে তা কাযা করে নেয়া। অর্থাৎ
অতিরিক্ত তাকবীরসহ দু রাকাত ঈদের নামাজ আদায় করা। যে অংশ ছুটে গেল সে অংশও ঈদের নামাজের আদায় পদ্ধতি অনুসরণ করে আদায় করে পূর্ণ করে নেয়া।
৩. রমজান শেষে আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদের উপর তাকবীর তথা আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণার বিধান রেখেছেন। আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে:
(شَهۡرُ رَمَضَانَ ٱلَّذِيٓ أُنزِلَ فِيهِ ٱلۡقُرۡءَانُ هُدٗى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَٰتٖ مِّنَ ٱلۡهُدَىٰ وَٱلۡفُرۡقَانِۚ فَمَن شَهِدَ مِنكُمُ ٱلشَّهۡرَ فَلۡيَصُمۡهُۖ وَمَن كَانَ مَرِيضًا أَوۡ عَلَىٰ سَفَرٖ فَعِدَّةٞ مِّنۡ أَيَّامٍ أُخَرَۗ يُرِيدُ ٱللَّهُ بِكُمُ ٱلۡيُسۡرَ وَلَا يُرِيدُ بِكُمُ ٱلۡعُسۡرَ وَلِتُكۡمِلُواْ ٱلۡعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُواْ ٱللَّهَ عَلَىٰ مَا هَدَىٰكُمۡ وَلَعَلَّكُمۡ تَشۡكُرُونَ ١٨٥ )
{আর যাতে তোমরা সংখ্যা পূরণ কর এবং তিনি তোমাদেরকে যে হিদায়াত দিয়েছেন, তার জন্য আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা কর।}
[সূরা আল বাকারা:১৮৫]৪. উক্ত আয়াতে, তুকাব্বিরুল্লাহা এর অর্থ তোমরা যেন তোমাদের হৃদয় থেকে এবং জিহ্বা দিয়ে আল্লাহর বড়ত্বের ঘোষণা করো। নিম্নবর্ণিত শব্দমালা দ্বারা ঈদের মুহূর্তে আল্লাহর বড়ত্বের ঘোষণা তথা তাকবীর দিতে হয়:
الله أكبر، الله أكبر، لا إله إلا الله، والله أكبر، الله أكبر، ولله الحمد
৫. পুরুষদের জন্য উঁচু আওয়াজে তাকবীর দেয়া সুন্নত। আর নারীরা দেবে গোপনে। কেননা নারীদেরকে আওয়াজ নিচু রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
৬. তাকবীর শুরু হবে ঈদের রাতে সূর্যাস্তের পর থেকে ঈদের নামাজ শুরু হওয়া পর্যন্ত। সূর্যাস্তের পর থেকে তাকবীর শুরু হবে যদি পরদিন ঈদ হবে বলে সূর্যাস্তের পূর্বেই নিশ্চিত হওয়া যায়, যেমন রমজান মাস ত্রিশ দিন পূর্ণ হয়ে গেল অথবা ঈদের চাঁদ উঠার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গেল।
কিছু দিকনির্দেশনা
১. ঈদের সময় মুসলমানদের মাঝে পরস্পর শুভেচ্ছা বিনিময় মুস্তাহাব।
২. ঈদে আনন্দিত হওয়া এবং আনন্দ প্রকাশ করা মুস্তাহাব। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও মুসলিম ভাই বেরাদরকে শুভেচ্ছা বিনিময়ও মুস্তাহাব।
৩. ঈদ একটি সুযোগ, যা আত্মীয়তা-সম্পর্ক জোড়া লাগানো এবং যাদের মধ্যে ঝগড়া হচ্ছে তাদেরকে মিলিয়ে দেয়ার সর্বোত্তম সময়।
৪. ঈদে কবর যিয়ারত করা শরীয়তসম্মত নয়। ঈদের আনন্দের সাথে, তা বরং সাংঘর্ষিক।
ঈদে পরিবারের সদস্যদের জন্য ভালো খাবার ও কাপড় চোপড় ও বৈধ বিনোদনের ব্যবস্থা করা জায়েয। ঈদ হলো খুশি-আনন্দের উপলক্ষ। আল্লাহ তাআলা আনন্দ প্রকাশকে নিষিদ্ধ করেননি। ইরশাদ হয়েছে:
( قُلۡ بِفَضۡلِ ٱللَّهِ وَبِرَحۡمَتِهِۦ فَبِذَٰلِكَ فَلۡيَفۡرَحُواْ هُوَ خَيۡرٞ مِّمَّا يَجۡمَعُونَ ٥٨ )
{বল, «আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমতে। সুতরাং এ নিয়েই যেন তারা খুশি হয়»। এটি যা তারা জমা করে তা থেকে উত্তম।} [সূরা ইউনুস:৫৮]
কাফিরদের ঈদ-পর্বে শুভেচ্ছা জানানো
কাফিরদের ঈদ-পর্বে শুভেচ্ছা জানানো মুসলমানদের জন্য জায়েয নয়; কেননা এর দ্বারা কুফরের নিদর্শনকে মেনে নেয়া হয়। কাফিরদের ঈদ-পার্বনের স্থানসমূহে গমন এবং তাদের আনন্দে অংশ নেয়া বৈধ নয়।
ঘ) জানাজার সালাত
জানাযার নামাজ ফরজে কিফায়া। এ নামাজ মুসল্লিদের জন্য সাওয়াব বর্ধন এবং মৃত ব্যক্তির জন্য সুপারিশ। জানাযায় লোক সংখ্যা বেশি হওয়া মুস্তাহাব এবং মুসল্লি সংখ্যা যত বাড়তে ততই উত্তম। তবে কাতার বেজোড় হওয়া উত্তম। জানাযার নামাজ মূলত মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া ও ইস্তেগফার। জানাযার নামাজ পড়ার পদ্ধতি তুলে ধরা হলো-
১. প্রথমত মৃত ব্যক্তিকে ক্বিবলার দিকে সম্মুখে রেখে ইমাম ও মুসল্লিদের দাঁড়ানো।
২. মুসল্লীরা নামাজের অজুর ন্যায় অজু করে ইমামের পিছনে ক্বিবলামুখী হয়ে দাঁড়ানো।
৩. মৃত ব্যক্তি পুরুষ হলে ইমাম তার মাথার পাশে দাঁড়ানো। আর মহিলা হলে কফিনের মাঝ বরাবর দাঁড়ানো। মৃত ব্যক্তির মাঝ বরাবর দাঁড়ানোতে কোনো দোষ নেই।
৪. জানাযার নিয়ত করে চার তাকবিরের সহিত নামাজ আদায় করা।
৫. কাঁধ বা কানের লতি পর্যন্ত দু’হাত উত্তোলন করে আল্লাহু আকবার বলে নিয়ত বাঁধা।
৬. অন্যান্য নামাজের ন্যায় ডান হাত বাম হাতের উপর রাখা।
৭. ছানা পড়া (কেউ কেউ সুরা ফাতিহা পড়ে অন্যান্য সুরা মিলানোর কথা উল্লেখ করেছেন।)
৮. দ্বিতীয় তাকবিরের পর দরূদে ইবরাহিম পড়া।
৯. তৃতীয় তাকবির দিয়ে ইখলাসের সঙ্গে হাদিসে বর্ণিত দোয়াসমূহের মাধ্যমে মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করা।
১০. চতুর্থ তাকবির দিয়ে যথাক্রমে ডানে ও বামে সালাম ফিরানোর মাধ্যমে জানাযার নামাজ শেষ করা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে মৃত ব্যক্তির মাগফিরাত কামনায় এবং নিজেদের সাওয়াব বৃদ্ধিতে সুন্দরভাবে জানাযার নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
উম্ম) বিতিরের সালাত
রাসুল (সা.) তিন রাকাত বিতর সালাত পড়তেন, এই মর্মে সহিহ রেওয়াত সাব্যস্ত হয়েছে। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসুল (সা.) তিন রাকাতের মাধ্যমে বিতরের সালাত আদায় করতেন। সুতরাং, আপনি তিন রাকাত আদায় করতে পারেন।
আয়েশা (রা.) এই তিন রাকাত সালাতের বৈশিষ্ট্য বা ধরন উল্লেখ করে দিয়েছেন। সেটা হলো, রাসুল (সা.) দ্বিতীয় রাকাতে বসতেন না। দ্বিতীয় রাকাতে সালামের জন্য বা তাশাহুদের জন্য অথবা কোনো কিছুর জন্য রাসুল (সা.) বসতেন না। তিনি শেষ রাকাতে বসতেন। এই রেওয়াত থেকে বোঝা যায় যে, রাসুল (সা.) তিন রাকাত একসঙ্গে পড়তেন, মাঝখানে বসতেন না, তৃতীয় রাকাতে রাসুল (সা.) বসতেন এবং সালাম ফেরাতেন।
বিতরের সালাতের ধরন নিয়ে আলেমদের মধ্যে দীর্ঘ বক্তব্য রয়েছে। আলেমগণ বিতরের সালাতের ছয়টি ধারা উল্লেখ করেছেন, যা থেকে বিতরের সালাত আদায় করা যায়। এ থেকে আমরা একটি ধারা উল্লেখ করলাম, সেটা হলো, আপনি যদি তিন রাকাত আদায় করতে চান, তাহলে তিন রাকাত একসঙ্গে আদায় করবেন।
তিন রাকাতের আরেকটি পদ্ধতি হচ্ছে, দুই রাকাত একসঙ্গে আদায় করবেন। দ্বিতীয় রাকাতে সালাম ফিরিয়ে তারপর দাঁড়িয়ে যাবেন। এরপর আরেক রাকাত আদায় করবেন। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা) থেকে সহিহ সনদে এটি সাব্যস্ত হয়েছে। সুতরাং এভাবেও আদায় করা জায়েজ রয়েছে।
চ) অন্যান্য সালাত
নফল সালাত যা সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত সময় ব্যতিত যে কোন সময় পড়া যায়, দু’রাকাত করে পড়ার নিয়ম।
Read More